Description
অনুবাদকের কিছু কথাঃ
সমাজে নারী ও পুরুষের অবস্থান, দায়িত্ব ও পারস্পরিক সম্পর্কের ওপরই গড়ে ওঠে সভ্যতার ভিত্তি। কোন সমাজ নারীকে যখনই তার সঠিক অবস্থান থেকে সরিয়ে এনেছে তখনই সে সমাজের বিপর্যয় ঘটেছে। ইসলাম সমাজে নারী ও পুরুষের যে অবস্থান নির্দেশ করেছে আধুনিক বস্তুবাদী পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রভাবে মুসলিম সমাজ সে অবস্থান থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে। আধুনিক ভ্রষ্ট সভ্যতার লীলাভূমি আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে এক ধনাঢ্য ইহুদী পরিবারে জন্মগ্রহণকারী প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ সু-সাহিত্যিক নওমুসলিম বেগম মরিয়ম জামিলা “Islam and the Muslim Women Today (ইসলাম ও আধুনিক মুসলিম নারী )” শীর্ষক এই পুস্তিকায় মুসলিম সমাজের এই বিকৃতির চিত্র যেমন এঁকেছেন, তেমনি পাশ্চাত্য সভ্যতার অন্তঃসার শূন্যতার ইতিবৃত্তও তলে ধরেছেন খুবই নিপুণভাবে। নারী ও পুরুষ একই মানব প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত হলেও দৈহিক ও মানসিক দিক দিয়ে উভয়ের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ব্যবধান। দৈহিকভাবে পুরুষ সবল, বীর্যবান, প্রবল সাহসী, সৃষ্টি প্রয়াসী, কর্মঠ ও কষ্টসহিষ্ণু। নারী অবলা, দূর্বল, অধিক পরিশ্রম ও প্রতিকূলতার মোকাবিলায় অক্ষম। নিয়মিত মাসিক রক্তস্রাব, গর্ভধারণ ও সন্তান পালনের গুরু দায়িত্বের কারণে গৃহের বাইরে কাজের জন্য সে অনুপযুক্তও। মানসিক দিক থেকে পুরুষ দৃঢ়চেতা, প্রত্যয়দীপ্ত ও সহনশীল; নারী আবেগ প্রবণ, দূর্বলচিত্ত ও লজ্জাশীলা। নারীদেহে রয়েছে চৌম্বক ও ক্ষারীয় পদার্থের আধিক্য। এবং পুরুষ দেহে রয়েছে বৈদ্যুতিক ও অম্লীয় পদার্থের প্রাধান্য। তাই চুম্বক ও বিদ্যুতের মধ্যে এবং এসিড ও ক্ষারের মধ্যে যেমন পারস্পারিক আকর্ষন প্রবণতা আছে; প্রাকৃতিকভাবে তেমনি নারী ও পুরুষের মধ্যে রয়েছে প্রবল জৈবিক আসক্তি। নারী দেহের আলোকচ্ছটা পুরুষকে যেমন আবিষ্ট করে, পুরুষ দেহের বিদ্যুতাভা নারীকে তেমনি করে বিমোহিত। তাই অবাধ যৌনাচার থেকে বাঁচার জন্য এবং নারীর স্বকীয়তাকে ধরে রাখার জন্য ইসলাম দিয়েছে পর্দার বিধান-ভিন পুরুষ থেকে নিজ দেহ ও চেহারার সৌন্দর্যকে লুকিয়ে রাখার হুকুম। ইসলাম নারীর আসল কর্মক্ষেত্র নির্দিষ্ট করেছে তার গৃহে-স্বামীর সংসারে। নারী তার নিজ অবস্থান থেকেই হতে পারে শিক্ষিতা, গুণবতী, বিদুষী, সমাজ হিতৈষী, জনসেবী ও সংগঠক। ইসলামের সোনালী যুগ এর প্রকৃষ্ট সাক্ষ্য বহন করছে। পুরুষ তার স্বাভাবিক যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে ঘরের বাইরের অঙ্গনে যেমন কর্তৃত্ব করবে, নারীও তেমনি তার স্বাভাবিকতার দাবী অনুসারে পর্দার অন্তরালে থেকে মানব সভ্যতার অর্ধেক কাজের আঞ্জাম দিবে। নারী তার প্রকৃতির দাবী অনুযায়ী সঠিক দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে ইসলাম যে কল্যাণময় সমাজ গঠন করেছে, বস্তুবাদী পাশ্চাত্য সভ্যতা তাকেই ধ্বংস করার জন্য “নারী স্বাধীনতা” নামক নিরুর বাঁশী বাজিয়েছে। এই নারী স্বাধীনতাবাদীরা নারীদেরকে স্বাভাবিক লজ্জা ও অবগুণ্ঠন থেকে মুক্ত করে কর্মের সকল অংগনে পুরুষের পাশাপাশি নিয়ে এসেছে। ফলে লিংগের দ্বারা নির্ধারিত মানবিক সকল সম্পর্ক আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হতে চলেছে। সংসার ও পরিবার ভেঙ্গে যাচ্ছে; পিতা-পুত্র ও মাতা-কন্যার সম্পর্ক টুটে যাচ্ছে। দীর্ঘ দেঁড়শ বছরেরও অধিকাল ধরে মুসলিম বিশ্ব পাশ্চাত্যের দ্বারা শাসিত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে মুসলিম সমাজে পাশ্চাত্য শিক্ষা, দর্শন, সংস্কৃতি, আইন ও জীবনাচারের যে অনুপ্রবেশ ঘটেছে, পরবর্তী সময়ে মুসলিম দেশগুলো ভৌগলিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করলেও অদ্যাবধি পরাশক্তিগুলোর সে গোলামীর নাগপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেনি। রাজনৈতিকভাবে অধিকাংশ মুসলিম দেশ এখনো মুসলিম নামধারী পাশ্চাত্যের মানস সন্তানদের দ্বারাই পরিচালিত এবং নতুন এই শাসকরা সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রায় সব ব্যাপারেই তাদের পশ্চিমা প্রভূদের মুখাপেক্ষী। ফলে ইসলামের কোন মূল্যবোধই এদের দ্বারা নিরাপদ নয়। পাশ্চাত্য শক্তি এদের মাধ্যমে মুসলিম সমাজের বিবর্তন চেষ্টায় সদা সচেষ্ট রয়েছে। তাদের অসংখ্য ষড়যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে অভাবগ্রস্থদের সাহায্যের নামে এনজিও ও মিশনারী তৎপরতার মাধ্যমে ধর্মান্তর এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় আর্থিক সহায়তার অস্ত্র প্রয়োগের মাধ্যমে সামাজিক বিকৃতি সাধন। সাম্প্রতিক কায়রো ও বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্ব নারী সম্মেলনের প্রস্তাবনাসমূহ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মুসলিম দেশগুলোতে পাশ্চাত্যের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, দর্শন, সংস্কৃতি, আইন ও বিচার পদ্ধতি পুরোপুরি চালু রয়েছে। শুধু পারিবারিক পদ্ধতি কিছুটা ইসলামিক। এটাকেও ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য তারা উঠে পড়ে লেগেছে। পর্দা ও পোশাক, নারী-পুরুষের সম্পর্ক, একাধিক বিবাহ, বিবাহ ও তালাক সংক্রান্ত আইন, পিতামাতার অধিকার, স্বামী-স্ত্রীর অধিকার এবং উত্তরাধিকার আইন ইত্যাদিকে পালটিয়ে দিয়ে সম্পুর্ণ পাশ্চাত্য আইন বিধান চালু করাই তাদের লক্ষ্য। পাশ্চাত্য ও ইসলামী সভ্যতা সম্পর্কে সবিশেষ অভিজ্ঞ লেখিকা উক্ত পুস্তিকায় এ বিষয়টিকেই সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। সচেতন পাঠক সমাজের কাছে বইটির এই নিবেদন পৌঁছে দেয়ার জন্যই বইটি বাংলায় রূপান্তরে ব্রতী হয়েছি। বাংলা ভাষা-ভাষী মুসলিম সমাজ, বিশেষ করে বৈরী পরিবেশে বেড়ে উঠা বর্তমান প্রজন্মের নারী ও পুরুষ এই বইয়ের মাধ্যমে কোন এক মাত্রায় পথের দিশা পেলেই আমার পরিশ্রম সার্থক হবে, ইনশাআল্লাহ্।
Reviews
There are no reviews yet.